আজকের বিপত্তারিণী পূজা আমাদের দেশে যে শত শত বিচিত্র উৎসব পালন করা হয় — তারই মধ্যে একটি। রথ যাত্রা আর উল্টো রথের মাঝের মঙ্গল ও শনিবার এই দেবীর পূজা কড়া হয় — সকল বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যে।

পশ্চিম ও উত্তর ভারতে যেমন বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য গণেশ কে পূজা করে, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্যের অনেক অঞ্চলে বিপত্তারিণীর পূজা হয়। তিনি দেবী সঙ্কটনাশিনী এবং দেবী দুর্গা(পার্বতী)-এর ১০৮ অবতারের অন্যতম। দেবী দুর্গার ১০৮ টি রূপের মধ্যে অন্যতম হলেন দেবী সংকটনাশিনী আর বিপত্তারিণী তাঁরই এক স্বরূপ।

বিপত্তারিণী পূজায় ১৩ সংখ্যার বিশেষ গুরুত্ব আছে, কিন্তু কেন তার কোনো ব্যাখ্যা কোথাও নেই। কেউ বলে শাস্ত্র মতে অন্যরা বিশ্বাস করে এটি একটি লোকাচার মাত্র। বিপত্তারিণী পূজায় দেবীকে ১৩ রকমের ফল, ১৩ ধরনের মিষ্টি ও ১৩ ধরনের ফুল নিবেদন করা হয়। যারা ব্রত রাখেন তারা এর সাথের তেরোটি পান, তেরোটি সুপুরি ও তেরোটি এলাচ ও নিবেদন করেন। ১৩ খানা লাল সুতো ১৩ খানা দূর্বা ১৩ টি সুপারি এবং এর সঙ্গে ঘট আমের পল্লব শিষ সহ ডাব ইত্যাদি লাগে। আর যারা এই পূজায় উপবাস করেন, তারা ১৩ ধরনের ফল বা খাবার খেয়ে নিয়মভঙ্গ কড়ে । তবে অনেক জায়গায় পূজা শেষে ১৩টি লুচি ও খাওয়ার প্রথাও রয়েছে।

এটি ও একটি লৌকিক পূজা যাকে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে। বেশির ভাগের লৌকিক পূজার মত এই পূজাটিও প্রধানত মহিলাদের।

এই পূজায় আবার কয়েকটি বিশ্বাস বা নিয়ম আছে। যেমন বিপত্তারিণী পূজার আগে ও পূজার দিনে আমিষ খাওয়া উচিত নয়। এমনকি চাল বা গমের কোনও জিনিস খাওয়া উচিত নয় বলে বিশ্বাস করা হয়। কাউকে চিনি দিতে নেই, তাতে সংসারে অশান্তি ও অর্থাভাব দেখা হাতে পারে। এমন কি পূজার সময় কারও সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। এতে দেবী রুষ্ট হতে পারে। পূজা শেষে লাল সুতো ছেলেদের ডান হাতে ও মেয়েদের বাঁ হাতে বাঁধতে হয়। পূজার আগে পরে চাল-চিঁড়ে-মুড়ি এসব খাওয়া যায় না৷ ব্রতপালনের পর খাবার যা খেতে হয়, সেখানেও ১৩ সংখ্যা রাখা আবশ্যিক৷ বিপত্তারিণী পূজার বিশেষ নিয়ম আর নিস্টার কোন ত্রুটি হোল চরম বিপদ আসতে পারে।

বিপত্তারিণী দেবীকে একটি লাল সুতো নিবেদন করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস এই সুতো হাতে বাঁধলে দেবী সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করেন।তাই মায়ের পূজায় দেওয়া লাল সুতোগুলি পরিবারের সদস্যদের হাতে মঙ্গল কামনার্থে এখানেও আবার ওই ১৩-ওর নিয়ম মানতে হয় আর সুতোগুলোতে ১৩ টা গিঁট বাঁধতে হয়, তারপর সেই সুতো হাতে বাঁধতে হয়।

সত্যি বলতে এটি ও একটি লৌকিক পূজা যাকে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে। বেশির ভাগের লৌকিক পূজার মত এই পূজাটিও প্রধানত মহিলাদের। বিবাহিত মহিলারা এই পূজা করেন স্বামী, সন্তান এবং সমগ্র পরিবারের মঙ্গল কামনার জন্যে। আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে এই রকম অনেক নিয়ম মেয়েদের উপর চাপানো হয়েছিল। সারা উত্তর ও পশ্চিম ভারতে মহিলারা এই পূজার কয়েক সপ্তাহ আগে সাবিত্রীর নামে বট পূজা করে আর ওই গাছে লাল সুতো বাঁধে।

আমার মনে হয় বর্ষার পর যে নুতন নতুন আপদ বা সমস্যা দেখা দেয, সে অতিবৃষ্টি হোক বা বন্যা হোক, বা সাপের উৎপাত, তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যেই এই পূজা।

No comments on 'বিপত্তারিণী পূজা'

Leave your comment

In reply to Some User