All Bangla Content
আজকের বিপত্তারিণী পূজা আমাদের দেশে যে শত শত বিচিত্র উৎসব পালন করা হয় — তারই মধ্যে একটি। রথ যাত্রা আর উল্টো রথের মাঝের মঙ্গল ও শনিবার এই দেবীর পূজা কড়া হয় — সকল বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যে। পশ্চিম ও উত্তর ভারতে যেমন বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য গণেশ কে পূজা করে, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্যের অনেক অঞ্চলে বিপত্তারিণীর পূজা হয়। তিনি দেবী সঙ্কটনাশিনী এবং দেবী দুর্গা(পার্বতী)-এর ১০৮ অবতারের অন্যতম। দেবী দুর্গার ১০৮ টি রূপের মধ্যে অন্যতম হলেন দেবী সংকটনাশিনী আর বিপত্তারিণী তাঁরই এক স্বরূপ।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাংলায় প্রায় ২৬০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে। এই রকম আঘাতের পর, বোঝাই যাচ্ছে, বাংলা আবার উত্তাল হতে চলেছে, আবার এক বা একাধিক আন্দোলন শুরু হব হব করছে। মুখ্যমন্ত্রী এটা আঁচ করে, মরিয়া হয়ে এক হাত খেললেন। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষকদের ডাকলেন আর চেষ্টা করলেন গরম হাওয়াটা তাঁর পালের দিকে টানতে। কিন্তু তিনি কোনও স্পষ্ট আশ্বাস তো দিতে পারেনইনি, বরং জল আরও ঘোলা করে দিলেন। উনি শিক্ষকদের স্বেচ্ছায় স্কুলে পড়াতে যাওয়ার কথা বলেছেন।
রবি ও সোমবার সরস্বতী পুজোর পর অনেক বাঙালির বাড়িতে, বিশেষ করে ঘটি পরিবারদের মধ্যে, গোটা সেদ্ধ খাওয়া হয়ে থাকে। আসুন জেনে নিই কেন এই গোটা সেদ্ধর প্রথা মানা হয়। পঞ্চমীর দিন সরস্বতী পুজোর পরেরদিনই সকালে ষষ্ঠী তিথিতে হয় ষষ্ঠী পুজো আর গোটা সেদ্ধ পর্ব।
সব সৃজনশীল ব্যক্তিদের মতো রাধাপ্রসাদ গুপ্ত — যাঁকে সকলে RP বা শাঁটুলবাবু বা 'দা' সম্বোধন করত । তিনি নিজের সৃষ্টি বা রচনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন, তাঁর লেখা গুছিয়ে রাখার কাজে সময় নষ্ট করতেন না ৷ আমরা কেউ জিজ্ঞেস করলে তিনি হঠাৎ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন, এবং তাঁর আরাম কেদারায় বসে চিন্তা করতেন। তারপর লাফিয়ে উঠতেন আর একগাদা কাগজ ফাইল ঘেঁটে অনেকক্ষণ পরে একটি হাতে লেখা বা টাইপ করা কাগজ বের করে বলতেন “এই দেখ। হতভাগাটাকে পেলুম। কোথায় কোথায় যে লুকিয়ে থাকে! আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি এটি অমুকের জন্যে লিখেছিলেন লিখেছিলাম।” আমরা ওই লেখা পড়তাম আর প্রয়োজন হলে তাঁর খাওয়ার টেবিলে বসে নিজের হাতে কপি করতাম। জেরক্স টেরক্স ছিল না।
মনমোহন সিংহ কখনও নিজের সমস্যা নিয়ে অন্যের কাছে মুখ খুলতেন না। নীরবে যন্ত্রণা সহ্যকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর তাই আমরা প্রায় জানিই না তাঁর স্বাস্থ্য কতটা ভেঙে পড়েছিল, আজ আচম্বিতে চলে যাওয়ার পর যেন সম্বিৎ ফিরল।
আদি নবরাত্রি উৎসব ছিল বসন্তকালে, চৈত্র মাসে। কিন্তু নিঃসন্দেহে, শারদীয় নবরাত্রি বা অকালবোধনকে (রবিবার থেকে মহানবমী অব্দি) ভারতে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে অনেক বেশি গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়।
পুরীর রথযাত্রা বাঙালিকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কথা মনে করিয়ে দেয়, যিনি জগন্নাথের প্রতি চরম ভক্তি ও প্রেমের প্রদর্শনের জন্য পরিচিত ছিলেন।১৫১০ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করার পরে শ্রীচৈতন্য যখন পুরীতে পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ হয়েছিলেন যে জগন্নাথের মূর্তিকে আলিঙ্গন করার জন্য দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটেছিলেন।ফলে পুরীর মন্দিরের পুরোহিতরা তাঁকে পাগল ভেবেছিল এবং বিরক্ত হয়ে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করেছিল ।
পরমেশ্বরন থনকপ্পন নায়ার বা পি টি নায়ারের প্রধান পরিচিতি, তিনি ছিলেন ‘বেয়ারফুট হিস্টোরিয়ান অব ক্যালকাটা’ বা ‘কলকাতার খালি পায়ের ইতিহাসবিদ’। জন্মসূত্রে মালয়ালি এই ইতিহাসবিদ ৯১ বছর বয়সে কেরলের আলুভায় তাঁর নিজের বাড়িতে মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। বছর ছয়েক আগে কলকাতার পাট চুকিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন জন্মভূমিতে। আমি হারালাম এক ৪৫ বছরের পুরনো পারিবারিক বন্ধু আর এক অতি প্রগাঢ় কলকাতাপ্রেমী গবেষককে, যিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই শহরের ইতিহাস সন্ধানে।
ভারতের শেয়ার বাজারে গত ৪ জুন যে পতন হয়েছে, তেমন ঐতিহাসিক পতন বিগত চার বছরে হয়নি। একদিনে শেয়ার বাজার এতটা পড়েনি। শেয়ার বাজারের সূচক হল সেনসেক্স ও নিফটি। যে মুহূর্তে খবরে প্রকাশ পেল যে অষ্টাদশ লোকসভায় ভারতীয় জনতা পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার দিকে এগোচ্ছে, সেদিন সেই মূহূর্ত থেকে সেনসেক্স ও নিফটিতে প্রায় ৫ শতাংশ পতন শুরু হল।
মনে থাকবে। ১৯৬৭, ১৯৭৭ বা ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচন যেমন ইতিহাসে অন্যতম চাঞ্চল্যকর নির্বাচন হিসেবে স্থান পেয়েছে ঠিক তেমনই স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। কোনও সন্দেহ নেই মোদি জামানার পরিসমাপ্তির সূচনা ঘটল এবারের নির্বাচনে। এই দেওয়াললিখন তাঁকে ভবিষ্যতে কতটা সতর্ক করবে তা ভবিষ্যতেই বলবে।
রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত সমগ্র বর্ধমান (পূর্ব এবং পশ্চিম), পার্শ্ববর্তী পুরুলিয়া, বীরভূম এবং বাঁকুড়ায় বেশ কয়েকটি ন্যাংটেশ্বর শিবমূর্তি পূজিত হয়। এগুলি প্রকৃতপক্ষে জৈন তীর্থঙ্করদের দিগম্বর মূর্তি। এগুলি প্রাচীন এবং মধ্যযুগে জৈনধর্মের সঙ্গে এই অঞ্চলের যোগাযোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
মহাবীর জৈন ধর্মে প্রবর্তক। কিন্তু এই বাংলার সঙ্গেও যে রয়েছে তাঁর গভীর সংযোগ, অনেকে তা জানে না। মূলত, বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে তাঁর সংযোগের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, যা প্রাচীনকাল থেকে 'রাঢ়' নামে পরিচিত।
মোদিজি হয়তো এটা দেখে খানিকটা বিস্মিতই হয়েছেন যে, জানুয়ারি মাসে রামমন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করেই হোক, কিংবা এই এপ্রিলে রামনবমীকে ঘিরেই হোক, বাঙালিকে তেমনভাবে উৎসাহিত হতে দেখা গেল না। উত্তর ও পশ্চিম ভারতে এসব নিয়ে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ছবি তদ্বিপরীত। বঙ্গ-বিজেপি চেষ্টার খামতি রাখেনি। খোলা তলোয়ার প্রদর্শন থেকে শুরু করে আগ্রাসী শোভাযাত্রা, বাদ ছিল না কিছুই।
জানেন কী, এই হালে গঠিত মধ্যপ্রদেশের নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কী ছিল? না, গ্রাম বা শহরের উন্নতি বা গরিব কল্যাণ তো নয়-ই, এমনকি কর্মসংস্থান বৃদ্ধিও সেখানে স্থান পায়নি। তাদের প্রথম ফরমান হল খোলা বাজারে মাছ-মাংস বা ডিম বিক্রি করা যাবে না। এর অনেক আগেই এই রাজ্যে ও অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলে ডিম বন্ধ করা হয়েছে, যদিও ডাক্তার বলেন অপুষ্ট বাচ্চাদের জন্যে ডিম খুবই স্বাস্থ্যকর।
কাহিনির সূচনা ১৯৫২-র অগাস্ট মাসে সিংহলি রেডিওতে একটি হিন্দি ফিল্মি গানের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। পাঁচ বছর আগেই ভারত স্বাধীন হয়েছে। দেশভাগ, দাঙ্গা ও আঞ্চলিক সংঘাতের বাতাবরণেও বাহ্যত দেশটা তখন সংহত, ঐক্যবদ্ধ। তবে সে দেশের না আছে কোনও সাধারণ ভাষা না আছে কোনও অভিন্ন আবেগ।
“ মশাই, কোন সালে জন্ম আপনার? “ কয়েক বছর আগে অবধি এরকম প্রশ্নের উত্তরে কোনও আম ভারতীয় বলতেন, “ ওই যে বছর বন্যা হল, সে বছরে” কিংবা “ভূমিকম্পের পরের বছর”। সালের অনুল্লেখ ছিল অবশ্যম্ভাবী। আর সালটা যে দিন থেকে শুরু হচ্ছে, সেই নিউ ইয়ার্স ডে বা নববর্ষের দিনটা কেউ খেয়ালই করত না।
গত ১২ অক্টোবর, ২০২৩-এ ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল টাইমস’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। শিরোনাম, ‘আদানির কয়লা আমদানি রহস্য যেটার মূল্য চুপচাপ দ্বিগুণ হয়ে গেল’। এই শিরোনামের নিচে কিছু কথা লেখা ছিল উপশিরোনাম হিসেবে। সেটাও সমানভাবে স্পষ্ট। সেখানে লেখা : কাস্টমস-এর নথিপত্র থেকে বোঝা যায়। ‘সাগরপাড়ের ফড়েদের ব্যবহার করে ভারতীয় বাণিজ্যসংস্থাগুলির একীভূত সংস্থা জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে।’
গান্ধী জয়ন্তী দিন মনে পড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) আর হিন্দু মহাসভা কি ভাবে ক্রমাগত তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। শুধু তাই না, তারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের থেকে সব সময় দূরত্ব বজায় রেখেছে। এমনকি ১৯৪২-এ গান্ধীজির ডাকা ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন, যাকে দেশের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে সঙ্কটময় মুহূর্ত বলা হয়, সেই সময়ও এই দুই সংস্থা ব্রিটিশ সরকারেরই পাশে ছিল, গান্ধীর দিকে নয়। মহাসভার সাভারকর ইংরেজদের সরাসরি সাহায্য না করলেও পরোক্ষ ভাবে মদত জুগিয়েছেন।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো শান্তিনিকেতনকে বিশ্বের একটি সেরা ঐতিহ্যের স্থান হিসাবে চিহ্নিত করার পর থেকে প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা শুরু হয়েছে। ইতিহাস বা সংস্কৃতি নিয়ে উৎসাহ যত বাড়ে ততই মঙ্গল। কিন্তু স্বাভাবিক প্রশ্ন : এই বিশ্ব সম্মানটি ঠিক কী আর তা বলতে কী বোঝায়?
দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষেরা যখন হিন্দুত্বের উগ্র রূপ দেখে খুব বিব্রত হচ্ছিলেন তখন অনেকেই খেয়াল করেননি যে ‘হিন্দিত্ব’ হয়তো তার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর। ‘হিন্দিত্ব’ সংখ্যাগুরুদের মধ্যেই হিন্দি ভাষাকে গায়ের জোরে চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রধান হিন্দুত্বের চেয়েও অধিক ক্ষতিকর এই ‘হিন্দিত্ব’। এর প্রবক্তারা বলেন যে, হিন্দি রাষ্ট্রীয় ভাষা তাই দোষ নেই, কিন্তু তা সত্যি নয়। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা কিছু নেই।