All Bangla Content
সরকারি মতে আজ মহাত্মা গাঁধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষের উদ্যাপনের সমাপ্তি। এই কোভিড সংক্রমণের মাঝেও বেশ ঘটা করে উৎসব অনুষ্ঠান নিশ্চই হবে, অন্তত টিভির পর্দার জন্য। প্রচুর অর্থের বিনিময়ে যে সব কার্যক্রম ভারত সরকার গত দু’বছর ধরে কার্যকরী করলেন, সেইগুলি কতটুকু সফল হয়েছে আর সাধারণ মানুষকে গান্ধীর ভাবধারার প্রতি আকর্ষিত করেছে, তা বিচার করে কোনো লাভ নেই, শোনার লোকের অভাবে। মূর্তি স্থাপনেরও খুব একটা সুযোগ নেই, কেননা বিগত ৭২ বছরে এমন কোনো শহর বা গঞ্জ বাকি নেই, যেখানে গান্ধীকে নিয়ে ভাস্কর্যের নিদর্শন দেখা যায় না। রাস্তার নামকরণ আমাদের একটা জাতীয় বদ্ধসংস্কার, কিন্তু এ ব্যাপারেও খুব একটা অবকাশ নেই — আমরা তো কত যুগ আগেই বিভিন্ন রাজ্যে প্রধান সড়কের নাম এম জি রোড করে ফেলেছি।
এই স্বাধীনতা দিবসেও আমরা নিশ্চয় দিল্লির লালকেল্লা থেকে প্রচুর ছাতি ফোলানো গর্বের কথা শুনব আর জাতিপ্রেমের ফোয়ারার আবেগে নিজেদের ভাসিয়ে দেওয়ার বাণীও পাব। কিন্তু যখন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর শহিদদের স্মরণ করবেন, তিনি কি এই ইতিহাসের সম্পূর্ণ সত্য ঘটনাগুলি বলবেন? তিনি ভুলেও আমাদের বলবেন না যে, তাঁর দলের নিয়ন্ত্রণকারী ও প্রেরণাদায়ক সংগঠন ওই সংগ্রামে অংশগ্রহণ তো করেনি বটেই, উপরন্তু কয়েক স্থানে বাধাও দিয়েছে? রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস-এর ভূমিকা বুঝতে গেলে তার দ্বিতীয় সরসঙ্ঘ-চালক এম এস গোলওয়ালকরের প্রবন্ধ ‘এক বীর্যবান জাতীয়তার দিকে’ পড়তে হবে। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ইংরেজ রাজশক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলন করাকে তাঁরা জাতীয়তাবাদ বলে মনে করেন না।
পরিযায়ী শ্রমিকরা হয়তো এটা তাঁদের পরম সৌভাগ্য বলে মনে করবেন যে, লকডাউনের ৭৫ দিন পরে দেশের বিচারালয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁদের দুঃখ স্বীকৃতি পেল। এর আগে যত বার উচ্চতম ন্যায়ালয়ের সামনে তাঁদের মর্মান্তিক অবস্থার কথা বলা হয়েছে, তত বারই অনেক বকুনি শুনতে হয়েছে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে আকস্মিক ফতোয়ার পর থেকেই যখন পরিস্থিতি বেসামাল হতে আরম্ভ করল, তখনই বেশ কিছু জনমুখী প্রতিষ্ঠান ও কতিপয় সুপরিচিত ব্যক্তি ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তখনও সরকার পক্ষের কথাই মান্য হয়।
এই ভয়াবহ মহামারির সময়ে আমরা অনেকেই আশা করেছিলাম যে আমাদের মধ্যে এখন ধর্মের, জাতির ও ভাষার বিভাজন ভুলে একসঙ্গে মাঠে নামব। যারা এই সব ভাগাভাগি থেকে লাগাতার রাজনৈতিক সুবিধে খুঁজে বেড়ায়, তারাও এই যুদ্ধে শামিল হবে। ভেবেছিলাম, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে যখন সম্পূর্ণ সমাজকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে, তখন অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বা প্রকাশ করার অবকাশ থাকবে না। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণা কাটতে বেশি সময় লাগেনি। প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় হুঁশিয়ারির পরের দিন থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক ভরে গেল মুসলিম বিরোধী ছবি আর ভিডিয়োতে। উগ্র হিন্দুবাদীরা উঠেপড়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করল যে ভারতবর্ষের মুসলিম পাড়ায় কী রকম বেপরোয়া ভাবে লকডাউন অমান্য করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে বার বার ছড়ানো হল এই মনগড়া মিথ্যে ছবিগুলি।
একটাই বিপর্যয়ে সমস্ত অঞ্চলের সমস্ত বর্গের ভারতবাসী বিপন্ন— এমন ঘটনা আমাদের গোটা ইতিহাসে এই প্রথম ঘটল। কোনও যুদ্ধেরই এমন প্রভাব পড়েনি। এমনকি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেরও নয়। চিনের সঙ্গে এক বার, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন তিন বার, তাতেও নয়। সব যুদ্ধই লড়েছেন সৈনিকরা, রণাঙ্গনে দাঁড়িয়ে। দেশের সর্বত্র সবাইকে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে, এমনটা এই প্রথম। করোনা মৃত্যুতে গণতন্ত্র এনেছে, মর্যাদা কিংবা ক্ষমতা, কাউকেই সে পাত্তা দেয়নি। শুধু এ দেশে নয়, দুনিয়া জুড়ে। ফলে আমাদের আতঙ্ক একেবারে সর্বগ্রাসী। এই বিপদের মোকাবিলায় আমাদের তাই ঐক্য চাই, চাই দৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে এখনও তার দেখা মিলছে না। এই বিষয়ে একসঙ্গে কথা বলতেই জি-২০ গোষ্ঠীর দেশগুলি অনেক সময় নিয়েছিল।
অনেকেই মনে করেন দিল্লীর সদ্য সমাপ্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যাতে পঞ্চাশ জনের মৃত্যু হয়েছে এই সরকারের চরম অকৃতকার্যতার এক নিদর্শন। কিন্তু এই ধারণা বোধহয় ঠিক নয়। এটা আসলে তাদের সুচিন্তিত পরিকল্পনার জয় এবং বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা করছে বুঝতে শাসক দল আমাদের কি বার্তা পৌঁছতে চেয়েছে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মাধ্যম। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ সর্বপ্রথম আমাদের স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন যে তাঁরা ভারতের মুসলমানদের কি ভাবে নির্বিকারে পুলিশের সামনেই সাফ করে দিতে পারেন। কেউ তাদের রুখতে পারবে না।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে কলকাতা বন্দরের নাম বদলানোর প্রস্তাব দেন, নিঃসন্দেহে সেই বিতর্কিত আইকনকে বাজি ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। নাম বদলের ক্ষেত্রে এত মহান দেশনায়কদের ছেড়ে শ্যামাপ্রসাদের মতো সাম্প্রদায়িক নেতার নির্বাচন নিয়ে বাংলার দিকে দিকে জোরালো প্রতিবাদও হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে যখন বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, সে-সময় এই পত্রিকায় প্রকাশিত আমার এক নিবন্ধে লিখেছিলাম, “মোদী-শাহ যুগল কী ভাবে প্রত্যাঘাত করবেন সেটাও আমাদের অজানা। একটা আশঙ্কা অনেকের মনেই আছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা।” (‘বহুত্ব, শেষ পর্যন্ত’, ২৭-১২)। আজ যখন সেই ‘দাঙ্গা’ সফল ভাবে কার্যকর করা হচ্ছে, প্রাণহানিও হচ্ছে, তখন খুব গভীর ভাবে বোঝা প্রয়োজন যে, আমাদের লড়াইটা আসলে কার বিরুদ্ধে।
নাগরিকত্বের প্রশ্নে দেশের বহু অঞ্চলে যে আকস্মিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রথম বড় মাপের সামগ্রিক আন্দোলন। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে দুনিয়ার বৃহত্তম গণতন্ত্র নীরবে দেখেছে, কর্তৃত্ববাদ ও সাম্প্রদায়িকতার আধিপত্য কী ভাবে উত্তরোত্তর জোরদার হয়েছে। কিন্তু এ বার যেন সে আপন কণ্ঠস্বর ফিরে পেয়েছে। ভারতের মানুষ দিনের পর দিন দেখেছেন, এক দিকে জনপরিসরের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, স্বাধিকার এবং ন্যায়ের কাঠামো ক্রমাগত বিধ্বস্ত হচ্ছে, অন্য দিকে কংগ্রেস নিজের মৃত্যুকামনায় একনিষ্ঠ, বামপন্থীরা ধূলিসাৎ, অন্য নানা বিবর্ণ বিরোধী দল দিশাহারা।
গত শনিবার, ৯ নভেম্বর, অনেক কিছুই হল। বার্লিন প্রাচীর ভাঙার ৩০ বছর পূর্ণ হল; শিখরা ভিসা ছাড়াই গেলেন পাকিস্তানের পবিত্র করতারপুর সাহিব গুরুদ্বারে; মুসলমানরা প্রস্তুত হলেন হজরত মহম্মদের আসন্ন জন্মদিন পালন করতে; কলকাতা আর মুম্বই রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করল ঝড়ের জন্য, দিনভর বৃষ্টি হল। কিন্তু, গোটা দেশের নজর ছিল দিল্লিতে, সুপ্রিম কোর্টের দিকে। আদালত অযোধ্যার জমি-বিবাদের মামলায় রায় দিল। এই বিবাদ ইতিমধ্যেই বহু হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে।
দুর্গাকে সব বাঙালিই খুব ভালোবাসেন। কিন্তু দুর্গাঠাকুর যে নিজেও মনেপ্রাণে কতখানি বাঙালি, সে বিষয়ে তাঁদের অনেকেই অবহিত নন। চেহারায়, কাজকর্মে এবং লোককাহিনিতে বঙ্গভূমির দুর্গা-মা বাকি দেশের থেকে একেবারে আলাদা। প্রথমত, শরৎকালে ভারতবর্ষের আর কোথাও কখনওই পরিবারের সব্বাইকে নিয়ে তিনি এরকম ঢাকঢোল পিটিয়ে আসেন না। দ্বিতীয়ত, অন্য কোনও প্রদেশে তাঁকে এমন আবেগে ভেসে স্বাগতও জানানো হয় না। এখানে তাঁর এমন কদর যেন তিনি একলা মেনকারই কন্যা নন, সমগ্র জনগোষ্ঠীরই আদরের মেয়েটি। এই হেঁয়ালি বুঝতে হলে, দেবীর দ্বান্দ্বিক চরিত্রের মূল সূত্রটি বোঝা দরকার। জানা দরকার, এক দয়াময়ী জননী কেন নিজের মায়ের কাছে এমন যুদ্ধং দেহি মূর্তিতে এসে দাঁড়ান! কিংবা, মা যখন অসুররাজের সঙ্গে জীবনমরণ যুদ্ধ করছেন, তখন তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরাই বা কোন আক্কেলে এমন নিরুত্তাপ দৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন!
রথমেই বলে নেওয়া ভাল, গত অর্ধশতকে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান যে চারটি দলের সঙ্গে আমার পরিচয়, তার কোনওটির প্রতিই আমার অনুরাগ নেই। ১৯৭৫ সালে যখন আইএএস-এ যোগ দিই, তখন জরুরি অবস্থা চলছে। খুব কাছ থেকে দেখেছি, কংগ্রেস কী ভাবে ‘মিসা’ প্রয়োগ করে, বিরোধীদের যথেচ্ছ গ্রেফতার করে এবং কণ্ঠরোধ করে গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছে। বামফ্রন্টের চৌত্রিশ বছরের শাসনকালে তেইশ বছর সেই সরকারের অধীনে কাজ করেছি। তখন একদলীয় রাষ্ট্রের উত্থান, প্রতি স্তরে ‘আমরা-ওরা’ বিভাজন এবং বিরোধীকে কোণঠাসা করার রীতিও দেখেছি।
সময় হয়েছে নির্বাচনের ফল প্রকাশের। এবং সময় হয়েছে এই সত্য স্বীকার করে নেওয়ার যে, নতুন সরকার যারাই গড়ুক, গত কয়েক বছরে ভারতীয় বাস্তবে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তার প্রভাব কাটবে না। ১৯৪৭ থেকে ২০১৪, এই দীর্ঘ সময়ে ভারতের সামগ্রিক চরিত্র ছিল মোটের উপর সহিষ্ণু, ধর্মনিরপেক্ষ এবং অনেকাংশেই গণতান্ত্রিক আদর্শে আস্থাশীল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে যে সব বিশ্বাস এবং আচরণ এ দেশের সমাজের মনে ঢোকানো হয়েছে এবং লালন করা হয়েছে, তার ফলে কাঁটাটা অনেকখানি ঘুরে গিয়েছে, কেবল হিন্দুত্বের দিকে নয়, দক্ষিণপন্থার দিকেও (দুটো সব সময় এক নয়)।
হয়তো সত্যিই এই আইন পুলিশি জুলুম থেকে হকারদের বাঁচাতে পারবে। কিন্তু স্থানীয় তোলাবাজদের হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করবে কে? এই আইনের ৪ নম্বর ধারা অনুয়ায়ী লাইসেন্স বিলি করা, এবং ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স নবীকরণ ও উত্তরাধিকার নিশ্চিতকরণ— এই সবের আগে এখনও ভেবে দেখার সময় আছে। ঠান্ডা মাথায় ভাল করে ভেবে নিয়ে, ফুটপাত আর সংলগ্ন রাস্তার প্রতিটি ইঞ্চি চিরতরে বেহাত হয়ে যাওয়ার আগে, অঞ্চল ধরে ধরে ঠিক করা দরকার যে, ‘হকার অঞ্চল’ ঠিক কোথায় কোথায় তৈরি হওয়া উচিত। আমরা জানি যে, বাস্তবিক হকারদের ছাড়া আমাদের রোজকার জীবন অচল।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একজন উৎসাহী এবং তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষক হওয়াতে আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে, এই নির্বাচন অন্যান্য বারের চেয়ে সত্যিই বেশ আলাদা রকম। এটা বলছি, কারণ বর্তমানে আমার মূল দুশ্চিন্তার বিষয় হল, আমরা কি ভোটদাতাদের সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করব না যাতে তাঁরা পরবর্তী কালে, যে কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের হাতে— সে কেন্দ্রেই হোক বা রাজ্যে— চিহ্নিত এবং নিগৃহীত না হন?
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, সিপিএম বা তৃণমূল পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলার বহু আগেই আইএএস, আইএফএস, আইপিএস ও নানা কেন্দ্রীয় সার্ভিস-এর প্রায় দেড়শো জন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কমিশনকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়েছিলেন। নেতৃত্বে ছিলেন এক জনজাতির তিন অফিসার। এই দুই অভিযোগে পার্থক্য আছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল জমানায় পরিচালিত সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচন যে অবাধ হয়নি, সে স্মৃতি টাটকা। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও পরে বামফ্রন্ট আমলের ‘রিগিং’ও কুখ্যাত। কিন্তু ‘কনস্টিটিউশনাল কনডাক্ট’ বা সাংবিধানিক আচরণবিধি নাম দিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে এর কোনওটির কথাই বলেননি অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা। এই দলে আছেন একাধিক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার, অনেক রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচনী আধিকারিক এবং বহু প্রাক্তন রিটার্নিং অফিসার।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল কয়েক ফুট দূরত্বে রাখা সাভারকরের ছবির ওপর। ‘হিন্দুত্ব’-এর ধারণাটির স্রষ্টা সাভারকর এই মতবাদের জনক হিসাবে স্বীকৃত। তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে এক হিন্দু ভারতের স্বপ্ন দেখতে এবং তার জন্য দাবি জানাতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। যে কারাগার পরিদর্শনে মোদী গিয়েছিলেন, সেটি হল আন্দামানের সেলুলার জেল। ভয়ঙ্কর ‘কালা পানি’র কথা ভারত কখনও ভুলতে পারবে না।
একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছেন? আজকাল কোনও কল সেন্টার থেকে আপনাকে ফোন করে কেউ একটা মোবাইল কানেকশন নেওয়ার জন্য যখন ঝোলাঝুলি করেন, সাধারণত প্রায় পুরো সময়টাই তিনি হিন্দিতে কথা বলেন। যিনি ফোন করেছেন তাঁর উচ্চারণ শুনে আপনি বুঝতে পারবেন যে ছেলেটি বা মেয়েটি বাঙালি, তাঁর হিন্দিতে বাংলা টানটাও বেশ টের পাবেন আপনি, কিন্তু কথাবার্তা হিন্দিতেই চলবে। সুইগি বা মিন্ট্রাকে ফোন করার সময়, ব্যাঙ্কে বা বড় বড় মল-এ, অ্যাপ ক্যাব-এর চালকদের সঙ্গে, বস্তুত প্রায় সর্বদা এবং সর্বত্রই আমরা আজকাল হিন্দিতে কথা বলি। হিন্দি বলায় চোস্ত হয়ে উঠতে না পারলে আজকাল খুব মুশকিল।
প্রসঙ্গত, শবরীমালা বা শবরীমালাই হল পাহাড়ের নাম, দেবতার নয়। দেবতা হলেন শাস্তা আয়াপ্পন। নামের দু’টি অংশই তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্ম-শাস্তা হল মালয়ালিতে বুদ্ধের একটি নাম— এই ধারণা বহুলপ্রচলিত যে, এখানে আদি দেবতা ছিলেন বৌদ্ধ। এখনও তীর্থযাত্রীরা সারা পথ ‘শরণম্’ বলতে বলতে যান। অন্য নামটি (আয়াপ্পন) এসেছে সুপ্রাচীন দ্রাবিড় ঈশ্বর ‘আই’ থেকে।
কথায় বলে, ভাগ্য মানুষকে গৌরবের পথে নিয়ে যায়, কিন্তু নিয়তি যা দেয় অহঙ্কার তাকে নষ্ট করে। খুব উচ্চ পদে আসীন মানুষদের কাছে মানুষ আশা করে যে তাঁরা কিছু দায়িত্ব স্বীকার করবেন। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি হল, তাঁরা আপন পদটির উপযুক্ত আচরণ করবেন। পদমর্যাদা তাঁরা যদি বাড়াতে না-ও পারেন, পদটির যাতে অবমাননা না হয়, সেটা নিশ্চিত করা তাঁদের কর্তব্য। ভারত এ ব্যাপারে বিশেষ ভাগ্যবান— এক জন ছাড়া সব প্রধানমন্ত্রীই তাঁদের পদের যোগ্য এবং প্রত্যাশিত আচরণই করে গিয়েছেন, এমনকি তাঁদের ব্যক্তিগত মতামতের বিরুদ্ধে গিয়েও।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে অগণিত দেবদেবীর নাম বলে গেলেন। ব্যাপারটা বিশেষ ভাবে চোখে পড়ল। দুর্গাপুজো আসছে, তাঁর সরকারের মন্ত্রী ও দলের নেতারা উল্টোরথের দিন খুঁটিপুজো নিয়ে দারুণ মেতে উঠলেন, সেটাও চোখে পড়ল। তবে ঘটনা হচ্ছে, বাংলায় এখন পুজো আর উৎসবের শেষ নেই। শীতলা, মনসা, রক্ষাকালী, ধর্মঠাকুর, বড়ঠাকুর এবং আরও অনেক দেবদেবী এ কালে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসী হয়েছেন, অনেকটা বিভূতিভূষণ বা সত্যজিতের অপুর মতো।
