All Bangla Content
প্রেসিডেন্সি কলেজের মুশকিল হয়েছিল এই যে, দেড়শো বছরেরও বেশি আগে, বাংলার নবজাগরণের সময়েই এটি নিছক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না, হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলার বৌদ্ধিক উৎকর্ষের প্রতীক। তখন থেকেই সেই ভাবমূর্তির দায় তাকে বহন করতে হয়েছে। অর্ধ শতাব্দী আগে— আমাদের তখন ছাত্রাবস্থা— নকশাল আন্দোলন বাংলার শিক্ষাব্যবস্থাটিকে বিপর্যস্ত করার পরে কয়েক দশক ধরেই এই প্রতিষ্ঠানের মান পড়ে যাওয়া নিয়ে অনেকে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। আমাদের প্রজন্মের অনেকেই যে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন, তা থেকে মনে হয় এই উদ্বেগের কিছুটা বাড়াবাড়ি ছিল।
সম্প্রতি দিল্লিতে রাজ্য বিধানসভার দু’জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের উপস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নিগ্রহ করেছেন। এই ঘটনার জেরে ওই দুই বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের মুখ্য আধিকারিককে নিগ্রহ করার স্পর্ধা সত্যিই অভূতপূর্ব। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫১ নম্বর ধারা অনুযায়ী এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। কোনও সরকারি অফিসারকে হুমকি দেওয়া বা এমনকী ঠেলে দেওয়াও এই ধারায় অপরাধ।
সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা বা হিংসা বাঙালির ধাতে খুব একটা নেই। তাই তাকে তাতিয়ে তুলতে দুষ্টশক্তিদের চিরকালই বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই দেখা দরকার, হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির দেবতাদের আমদানি করে কী ভাবে চৈত্রের তপ্ত বাংলাকে আরও উত্তপ্ত করে তোলা হচ্ছে। বঙ্গভূমিতে এই মাসটা শিবের গাজনের মাস। এমন শিব তো ভূভারতে আর কোথাও নেই! কৈলাসের অধীশ্বরকে আমরা শিবায়নের পদ্য শুনিয়ে আমাদের মধ্যে ডেকে এনেছি, তাঁকে গামছা পরিয়েছি, আমাদের শিবের পিছনে তাঁর স্ত্রী সারা দিন ঝাঁটা হাতে তাড়া করে বেড়ান।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিই সেই সময়, যখন বসন্ত ইউরোপে পাড়ি দেয়, তুষারকে গিয়ে বলে, এখন তোমার বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে; আর তার পরেই ফের ভারতে ফিরে আসে সসম্মানে। দু’টো উৎসবেরও মরশুম এটা, খ্রিস্টানদের ভ্যালেন্টাইন’স ডে আর হিন্দুদের শিবরাত্রি পালিত হয় এই সময়েই। উৎসব দু’টি সাধারণত সতর্ক থাকে যাতে এর সঙ্গে ওর দেখা না হয়ে যায়, কিন্তু এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি— একই দিনে দু’টি উৎসব পড়েছে। ভ্যালেন্টাইন’স ডে সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা, আর পঞ্জিকামতে রাত্রি ১২।৪২।৩৯ মধ্যে শ্রীশ্রীশিবরাত্রিব্রত ও পূজা।
সুপ্রিম কোর্টের চার বর্ষীয়ান বিচারকের সাম্প্রতিক সাংবাদিক সম্মেলন কয়েকটা বিষয় একটু অস্বস্তিকর ভাবেই মুক্তকচ্ছ করে দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের কতকগুলো সুনির্দিষ্ট অবস্থানকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রশ্নের মুখে। যেমন, ২০১৬–র ৩০ নভেম্বর বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চের অন্তর্বর্তী রায়— ভারতের সমস্ত সিনেমা-হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আগে জাতীয় সংগীত বাজাতে হবে— বিশেষ একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি। মহামান্য বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেছিলেন, ‘সব সিনেমা-হলে ছবি শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজাতে হবে।’
কলকাতা হল ভারতের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ— ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র এই সাম্প্রতিক রিপোর্টে নিশ্চয় আমাদের গর্বের কারণ আছে। অবশ্য কোয়েম্বত্তূর হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ শহর, কিন্তু সেটাকে ‘প্রধান শহর’ বলা চলে না। যা লক্ষ করার, কলকাতায় অপরাধের হার দিল্লির আট ভাগেরও কম, যদিও রাজধানীতে অপরাধ দূর করতে অনেক বেশি টাকা আর লোকবল খরচা হচ্ছে। বেঙ্গালুরুকে খুবই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য ধরা হয়, তার তুলনায় কলকাতায় অপরাধের হার চার ভাগেরও কম, আর মুম্বইয়ের তুলনায় তো কলকাতা অনেক ভাল অবস্থানে আছেই।
হাতে ঠিক তিন দিন সময়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নির্দেশ পাঠাল, ৩১ অক্টোবর সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মদিন পালন করতে হবে। ‘একতার জন্য দৌড়’, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা, নাটক, গান-বাজনা, প্রবন্ধ লেখার আয়োজন করতে হবে, টি-শার্ট বানাতে হবে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। এই গোত্রের হুকুম দেওয়ার কোনও এক্তিয়ার যে তাদের নেই, সে কথা ভুলে গিয়ে কমিশন আদেশ করল, অনুষ্ঠানের ছবিসহ রিপোর্ট পাঠাতে হবে দিল্লিতে।
প্রতি বছর কলকাতা, দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরের নাগরিকরা যখন লক্ষ লক্ষ মানুষকে কলা ও অন্যান্য ফল নিয়ে রাস্তা দিয়ে নদী বা সমুদ্রের দিকে যেতে দেখেন, তাঁরা নিশ্চয়ই ভাবেন, ছট পুজো ব্যাপারটা কী? দেওয়ালির ছ’দিন পরে এই উৎসব, এই জন্যেই এর নাম ছট, যা আসলে ষষ্ঠী-র একটি কথ্য রূপ। একে সূর্যষষ্ঠীও বলা হয়।
শেষ পর্যন্ত, ১৯৮২ সালে, মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় এবং ন্যূনতম সুযোগসুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করতে থাকে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও যখন রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে উৎখাত করা যায় না, তখন শুরু হয় রাষ্ট্রের সাহায্যে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক আক্রমণ। রোহিঙ্গারা এর প্রতিবাদে তৈরি করে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি, যারা পাকিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলমান জঙ্গিগোষ্ঠীর সাহায্য নিয়ে প্রত্যাঘাত করে। খবর পাওয়া গিয়েছে যে, কিছু রোহিঙ্গা আইএস জঙ্গিদের মদত পাচ্ছে এবং তারা বাস্তবিকই ‘সন্ত্রাসবাদী’। কিন্তু সেটা পুরো ছবির একটা অংশমাত্র।
মায়ানমারের ঘনিয়ে ওঠা ভয়াল মেঘ ইতিমধ্যেই ছেয়ে ফেলেছে দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলকে। এই মুহূর্তে আমরা এক অতিকায় মানবাধিকার সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যদি অবিলম্বে এই সংকটের মোকাবিলায় শক্ত হাতে হাল না ধরা যায়, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে তা আমাদের ওপরে এসেই আছড়ে পড়বে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর লাগাতার আক্রমণে সারা বিশ্ব স্তম্ভিত। এই সময় এ ব্যাপারে ভারতের একটি পরিষ্কার ও দৃঢ় অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।
চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫.৭ শতাংশে নেমেছে। তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই সংবাদ শুনে নিশ্চয়ই আহ্লাদিত হওয়ার কারণ নেই। আপাতত পরের রাউন্ডের চমকপ্রদ বক্তৃতার জন্য অপেক্ষা। তবে যেটা উদ্বেগজনক, তা হল রিজার্ভ ব্যাংকের ঘোষণাটি: ৫০০ এবং ১,০০০ টাকার নোটে বাতিল হওয়া ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকার ৯৯ শতাংশই জমা পড়েছে ব্যাংকের খাতায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুন, তাঁর মতামতটি শুনতে চাওয়া ভারতবাসীর অধিকার। নোট বাতিল করলে অর্থনীতির কী কী উপকার হবে, আমরা তাঁর মুখে শুনেছিলাম। এখন যেখানে দাঁড়িয়েছি, সে সম্বন্ধেও তাঁর মতামতটি জানা প্রয়োজন।
শ্রাবণ মাস এলেই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রবল বৃষ্টি সহ্য করে পথে নামেন। গন্তব্য গঙ্গা বা কাছাকাছি অন্য যে কোনও নদী। নদীতে গিয়ে দু’ঘড়া জল ভরে, শিবমন্দিরে গিয়ে শিবের মাথায় সেই জল ঢালেন। প্রথাটি অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু এ ভাবেই হিন্দুধর্ম যুগে যুগে গঙ্গা ও ভক্তিপ্রাণ মানুষের মধ্যে কায়িক-মানসিক সংযোগ সাধন করে চলেছে। গঙ্গা তো শুধু এক নদী নয়, সর্বগ্রাহী এক ধর্মেরও রূপক। ঘটনাচক্রে আমাদের রাজ্যের তিন প্রধান তীর্থ— গঙ্গাসাগর, কালীঘাট ও তারকেশ্বর— গঙ্গার সঙ্গে ওতপ্রোত। এদের মধ্যে তারকনাথের মন্দিরটি তুলনায় নবীন। তবু, তারকেশ্বরের ইতিহাস ঘাঁটলে বাঙালির ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।
ভিড়ে-ঠাসা তীর্থযাত্রায় বা ঘরের নিশ্চিত আরামে বসে দূরদর্শনের পর্দায়, যে ভাবেই বাঙালি আজ পুরীর রথ দর্শন করুক, সেই মুহূর্তে তাদের মনে পড়ে শ্রীচৈতন্যের নাম। সন্ন্যাস নেওয়ার অল্প দিন পরে, ১৫১০ সালে পুরীতে প্রথম বার পৌঁছে মহাপ্রভু ভাবে বিভোর, জড়িয়ে ধরতে গিয়েছেন দারুবিগ্রহ। সফল হননি। তাঁর স্বেদকম্পিত শরীর, আনন্দাশ্রু, রাগানুরাগা ভক্তির আবেশ ও নৃত্য কোনওটারই মর্ম সে দিন বুঝতে পারেননি মন্দিরের কর্মীরা। প্রায় উন্মাদ ভেবে তাঁকে সে দিন থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জগন্নাথ মন্দিরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রীচৈতন্য এবং তাঁর ভক্তদের অনিশ্চিত সম্পর্কের সেটাই শুরু।
রামের নামে যে অভূতপূর্ব আগ্রাসনের প্রদর্শনী দেখলাম, তাতে মনে হল, আমরা চৈত্র মাসে বাঙালির পূজিত চিরকালীন দেবদেবীদের ভুলে গিয়েছি। এই মাসটা শিব, শীতলা, অন্নপূর্ণা বা বাসন্তী এবং ধর্মঠাকুরের। এবং বাঙালিরা খুব নিশ্চিত যে দুর্গা বাড়ি আসেন আশ্বিনে, তা সে বোধন অকাল হোক আর না হোক। এ মাসে সবচেয়ে বর্ণময় উৎসব গাজন, অনেকে বেশ কিছু দিন ধরে শিব আর পার্বতী সেজে বেড়ায়, শিবের নাম করতে করতে। আমরা ধর্মকে এ ভাবেই পথে পথে নিয়ে যেতাম, ভক্তি ও নাচ-গান-মূকাভিনয়ের মাধ্যমে। তরোয়াল আর হুমকির মাধ্যমে নয়। উনিশ শতকের জাতিতাত্ত্বিকরা উত্তর ভারতে রামনবমী পালনের কথা লিখেছেন, কিন্তু বাংলায় নয়। এবং এটা খুব পরিষ্কার ভাবে বুঝতে হবে, দুর্গার জয় উদযাপন আর রামের জন্ম উদযাপনের মধ্যে ফারাক আছে। দুটো ঐতিহ্য আলাদা, আশ্বিনের অকাল বোধনে তাদের দেখা হয় মাত্র। বাঙালিরা একে পালন করে দুর্গার নামে, অন্যরা আশ্বিনের নবরাত্রি ও দশেরাকে পালন করে রামের নামে।
শিল্পক্ষেত্রে নিবেদিতার কাজ নিয়ে কথা বলবার আগে তাঁর সার্বিক অবদান নিয়ে সামান্য দু-এক কথা বলে নেওয়া ভাল। তিনি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দকে প্রথম দেখেছিলেন। স্বামীজীর বাণী ও কাজ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু, ১৯৯৬ সালে তাঁর দ্বিতীয় সাক্ষাতেই নিবেদিতা বুঝতে পারেন তিনি এই মহান মানুষটির পথ ধরে হতোদ্যম, অবদমিত ভারতবর্ষের উদ্ধারের কাজে ব্রতী হতে চান। যাতে ভারত আবার বিশ্বের দরবারে তার নিজের স্থান খুঁজে পায়। প্রাথমিক কতগুলি দ্বিধা কাটিয়ে স্বামীজী রাজি হন, এবং ১৮৯৭ সালে নিবেদিতা কলকাতার জাহাজ ধরেন। তিনি স্বামীজীর প্রধান বিদেশী শিষ্যা, একজন একনিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গিনী হিন্দু হিসেবে সুবিখ্যাত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্ত শক্তি এবং তাঁর আত্মজনদের ত্যাগ করে তিনি ভারতবর্ষের জন্য জীবনপাত করেছেন। স্বামীজীর ফেলে যাওয়া রশি তিনি তুলে নেন, এবং তাঁর সবথেকে বড় অবদান হল ভারতীয় জনগণকে তাদের ঘুমন্ত দশা থেকে জাগিয়ে তোলা - নতুন জাতি হিসেবে জাগিয়ে তোলা, যাদের নিজেদের ঐতিহ্য আর সভ্যতা নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত।
বাঙালির ধাতটাই যে আলাদা, সেটা কেবল তাকে কাঁটাওয়ালা মাছ মুখে নিয়ে অনর্গল তর্ক করতে দেখেই বোঝা যায় না, বাঙালির সরকার এবং ভগবান যে অবশিষ্ট ভারতের চেয়ে এতটাই অন্য রকম, সেটাও তার একটা প্রমাণ।
সত্যি বলতে কী, মুসলিম সমাজের বাইরে বেশির ভাগ মানুষ ঠিক বুঝতে পারেন না, ‘শুভ মহরম’ বার্তা পাঠানো উচিত কি না। মহরম আসলে একটি দিন নয়, একটি মাস। ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম, এবং পবিত্রতম মাসগুলির একটি। প্রসঙ্গত, প্রাক্-ইসলাম পশ্চিম এশিয়াতেও কিছু কিছু মাসকে পবিত্র বলে মনে করা হত এবং সেই সব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল।
একমাত্র বাঙালিই বিশ্বকর্মার পুজো করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের একটি নির্দিষ্ট ধরাবাঁধা তারিখে— ১৭ সেপ্টেম্বর। এটা একটু আশ্চর্যের। উত্তর ও পশ্চিম ভারতে শিল্পী, কারিগর ও শ্রমিকরা তাঁদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির পুজো করেন দেওয়ালির পরের দিন, গোবর্ধন পুজোর দিনে।
প্রতি বছর মিলাদ-উন-নবি দিনটি আরও একটা ছুটির দিন। কিন্তু কেন ছুটি, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। রবিউল আওয়াল মাসের দ্বাদশ দিনটির আন্তর্জাতিক পরিচিতি ‘মলিদ’ নামে, এই দিনেই নবি মহম্মদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কথিত।
ধ র্মবিশ্বাসী হোন বা নাস্তিক, পণ্ডিতদের কাছে কৃষ্ণের আকর্ষণ বরাবরই অত্যন্ত প্রবল, তবে তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে ঝঞ্ঝাট হল ইতিহাসবিদদের। লোকবিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, বেদে কোথাও কৃষ্ণের দেখা মেলে না, অনেক চেষ্টাচরিত্র করে তাঁর প্রথম নির্ভরযোগ্য উল্লেখ পাই খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর ছান্দোগ্য উপনিষদে। আরও পরের তৈত্তিরীয় আরণ্যকেও তাঁর কথা আছে, তবে তাঁর আশ্চর্য জন্মকাহিনির নামগন্ধ নেই সেখানে। সে বৃত্তান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে খ্রিস্টীয় তৃতীয় বা চতুর্থ শতকের বিষ্ণুপুরাণ ও হরিবংশ পর্যন্ত।
শ্রাবণ মাস এলে চাষিদের মুখে হাসি ফোটে, কবিদেরও, কিন্তু এই সময় সাপেরা তাদের বানভাসি ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে, মানুষ তাদের ভয় পায়, পুজোও করে। সেই কারণেই শ্রাবণের শুক্লা পঞ্চমীকে নাগপঞ্চমী হিসেবে পালন করা হয়। এ বছর আজ সেই তিথি। সাপকে আমরা ভয় পাই, কিন্তু এই প্রাণীটির কাহিনিতে শত শত, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় মনের বিবর্তনের কথা ধরা আছে।
