বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম থেকেই গুরুপূর্ণিমার ধারণাটা এসেছে। বর্ষার একেবারে গোড়ায় গুরুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষা বা ধর্মনিষ্ঠার পর্ব শুরু হত, আর এই অসুবিধেজনক ঋতুতে সন্ন্যাসীদের জনপদ থেকে সরিয়ে নেওয়াও যেত।
My first recollection of Sheikh Mujibur Rahman is imbedded in my mind, as it was also my first brush with the law. It was in January 1969, a month after I had appeared for my class 11 School Board examination, that my political 'mentor' decided that we must join a protest outside the Pakistani High Commissioner's office to demand the release of Sheikh saheb from jail. Who? Sashanka Sekhar Ray explained the Agartala Conspiracy Case and how the Pak government had put Sheik Mujib behind bars for two long years.
হিন্দুধর্ম হল পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবিত ধর্ম। এই ধর্মে এখনও কিছু খুব পুরনো নিয়ম বহাল রয়েছে, যেগুলো সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত হয়নি, আধুনিক জীবনের আঙ্গিকে সেগুলি বেমানান। সময়ের সঙ্গে রীতিনীতিগুলো বদলালে জীবনের কিছু কঠোর বাস্তবকে স্বীকার করে নেওয়া অনেক সহজ হত। বস্তুত, কিছু আধুনিক মেয়ে, মা-ঠাকুমাদের অশেষ অস্বস্তিতে ফেলে, ঋতুচক্র বিষয়ে তাদের পুরুষ বন্ধু বা সহকর্মীর সঙ্গে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বা লোকসমক্ষে কথা বলা শুরু করার আগে অবধি অত্যন্ত সচেতন ভাবে এই বিষয়ে সমস্ত কথা চেপে রাখা হয়েছে— কেবল গুজগুজ, ফিসফিস।
এত বড় এবং বৈচিত্রময় একটা দেশ, একশো কোটির বেশি মানুষ, অথচ প্রায় গোটা দেশেই নতুন বছর শুরু হয়েছে মোটামুটি একই সময়ে, বড়জোর কয়েক দিনের ব্যবধানে। এটা অবাক করে দেয় বইকী!
যাঁ রা মনে করেন, শীতলা নিতান্তই গ্রামের অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের আরাধ্য রকমারি স্থানীয় দেবদেবীর এক জন, তাঁদের জানা নেই, তিনি গোটা ভারতে পূজিত হন। কেবল দক্ষিণ ভারতের কিছু এলাকায় তাঁর পুজো হয় না, কারণ সেখানে সর্বার্থসাধিকা দেবী মারিয়াম্মার রাজত্ব। স্কন্দপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের মতো কয়েকটি প্রাচীন পুরাণে শীতলার কথা আছে, সেখানে তাঁকে গুটিবসন্তের (স্মল পক্স) নিয়ন্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে। যজ্ঞের আগুন থেকে তাঁর উদ্ভব, এবং ভগবান ব্রহ্মা কেবল তাঁকে নয়, তাঁর সহচর জ্বরাসুরকেও পুজো করার জন্য মানবজাতিকে উপদেশ দিয়েছিলেন।
When we look at Durga's image in her desperate battle against the ferocious Mahishasura, we may also notice that her family members appear rather disinterested. Handsome Kartik does not lift his weapons; Ganesh appears almost smiling; Lakshmi holds on to her jhampi more tightly and Saraswati looks pretty with her veena. To understand this strange situation, we have to turn to history, first from other countries and then closer at home.
যুগে যুগে বাঙালি ছাত্রছাত্রীরা মা সরস্বতীকে মনেপ্রাণে ডেকেছে, পরীক্ষাটা যেন ভাল হয়। সরস্বতীকে আমরা ঘরের মানুষ হিসেবে দেখি। তিনি কিন্তু যে সে দেবী নন। বৈদিক যুগের যে গুটিকয়েক দেবদেবীর পুজো এখনও হয়,সরস্বতী তাঁদের এক জন। আজ বাংলার বাইরে ভারতের অন্যান্য জায়গায় তিনি বিশেষ পূজিত নন, অথচ সুদূর জাপান আর বালি দ্বীপে তিনি এমন আরাধিত!
নানা রঙের আলোয় আর কাগজের তারায় পার্ক স্ট্রিট সেজে উঠেছে, কলকাতায় আনন্দময় বড়দিন এল। অনেকেই এই দিন সাহেবপাড়ায় সন্ধেটা কাটাবেন, ধর্মপ্রাণরা সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালে যাবেন মধ্যরাত্রির উপাসনায়। খ্রিস্টের জন্মদিনে শুরু হবে এক সপ্তাহের উত্সব, নিউ ইয়ার্স-এ যার শেষ।
ভাইবোনের পরস্পর প্রীতি জানানোর জন্য ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা রক্ষাবন্ধনের মতো অনুষ্ঠান ভারতের বাইরে বিশেষ কোথাও নেই। ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উত্তর ভারতে ভাই দুজ নামে পরিচিত, বাংলায় ভাই ফোঁটা, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও কোঙ্কণ এলাকায় ভাই বীজ বা ভাউ বীজ। নেপালে ভাই টীকা তো প্রায় দশমী বা দশেরার মতো বড় ব্যাপার। দক্ষিণ নেপালে একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়। বা
একটা জিনিস পুজোর সময় আমাদের সকলেরই চোখে পড়ে। মা দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে ধুন্ধুমার লড়াই করছেন, অথচ তাঁর ছেলেমেয়েরা নিতান্ত উদাসীন ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে। সুদর্শন কার্তিক তাঁর অস্ত্র তোলেন না, গণেশের মুখে তো একটা হাসির আভাস, লক্ষ্মী নিজের ঝাঁপিটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেন, সরস্বতীও বীণা হাতে দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকেন। এই অদ্ভুত দৃশ্যের অর্থ বুঝতে ইতিহাসের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথমে বাইরের ইতিহাস, তার পর ঘরের।
সবচেয়ে তর্কবাগীশ বাঙালিটিও নিশ্চয় মানবেন, মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ এক বিরল অনুষ্ঠান, যা আমাদের সাংস্কৃতিক অতীতের সঙ্গে যোগসূত্র রেখে চলেছে। ১৯৩২-এ যখন মহিষাসুরমর্দিনী শুরু হয়, আকাশবাণীর তখনকার প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার বোধ করি ভাবতেও পারেননি, এ অনুষ্ঠান এতটা সফল হতে চলেছে। আকাশবাণীতে যাঁদের সিরিয়াস আড্ডা থেকে এই অনুষ্ঠানের ভাবনাটা এসেছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক, বাণীকুমার, ‘গল্পদাদু’ যোগেশ বসু, রাইচাঁদ বড়াল এবং অবশ্যই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
কাল ২ নভেম্বর। মৃতেরা এই দিন দুনিয়া জুড়ে এক আশ্চর্য ঐক্য রচনা করে। খ্রিস্টানদের তো এটি ‘অল সোল্’স’ ডে’। এ দিন তাঁরা প্রয়াত স্বজনদের স্মরণ করেন, তাঁদের সমাধিতে ফুল রাখেন, দীপ জ্বালান, সমাধিক্ষেত্রগুলি আলোকয় আলোকময় হয়ে ওঠে। আমরা খেয়াল করি না, পৃথিবীর বহু অঞ্চলের মানুষ মনে করেন, অক্টোবর-নভেম্বরের এই সময়টাতেই ‘জীবিত ও মৃতের ভুবনের মধ্যে সীমারেখাটা ক্ষীণতম হয়ে ওঠে, কারণ বিদেহী আত্মারা এই সময় তাঁদের জীবিত স্বজনদের কাছে ফিরে আসেন।’
পবিত্র হজ-এর মাসের দশম দিনে পালিত হয় ইদ-উল-জুহা। অন্য নাম ইদ-আল-আদা। এটি চার দিনের উৎসব। মক্কার পূর্ব দিকে মাউন্ট আরাফত থেকে হজযাত্রীদের নেমে আসার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপতন ঘটে। পারস্যে এর নাম ইদ-এ-গোরবান, তুরস্কে কুরবান বয়রামি, বলকান অঞ্চলে কুরবান বজরম, মান্দারিন চিনা ভাষায় একে বলে কুয়েরপাং চিয়ে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় হারি রায়া কোরবান, বাংলায় কোরবানির ইদ।
এ দেশে হিন্দু ক্যালেন্ডারের ভাদ্রপদ মাসে শুক্লা চতুর্থী গণেশ বা বিনায়ক চতুর্থী হিসেবে পালন করা হয়। কলকাতার মানুষ গণেশ চতুর্থীকে তুচ্ছ করলে ভুল করবেন। সর্বভারতীয় পরিসরে এটিই দুর্গাপুজোর একমাত্র যথার্থ প্রতিদ্বন্দ্বী। তা ছাড়া, এই উত্সব দুর্গাপুজোর চেয়ে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্গাপুজো প্রধানত বাঙালির উত্সব, বাংলার বাইরে বা বিদেশেও তা-ই।
বোনেরা ভাইদের হাতে রাখি পরিয়ে দেওয়ার জনপ্রিয় উত্সবটি দেখে দুটো কথা মনে হয়। এক, আমাদের ধর্ম ও ইতিহাসের কাহিনিতে ভাইয়েরাই তো চিরকাল বোনদের রক্ষা করে এসেছে, রক্ষাবন্ধন নামক অনুষ্ঠানে ব্যাপারটা তবে হঠাৎ উল্টে গেল কেন?
রমজান মাস এবং ইদের চাঁদ, এইটুকু আমরা জানি, কিন্তু ইদ-উল-ফিতর-এর উত্স সম্বন্ধে অনেকেরই বিশেষ ধারণা নেই। ভারতের বৃহত্তম ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের এই বিরাট উত্সবটি সম্পর্কে আর একটু জানলে মন্দ হয় না। আল্লাহ্-র দূতের মুখে কোরান প্রথম শোনার ঘটনাটির স্মারক হিসেবে চান্দ্র ক্যালেন্ডারের নবম মাসকে হজরত মহম্মদ রমজানের উপবাসের জন্য চিহ্নিত করেছিলেন।
এই দিনটাতে আমার মা তাঁর চঞ্চল ছেলেমেয়েদের শীতলপাটিতে বসিয়ে শোনাতেন, কী ভাবে মা ষষ্ঠী সমস্ত শিশুদের মঙ্গল করেন, তাদের দীর্ঘ জীবন দেন। তিনি কয়েকটি মন্ত্র পড়ে একটা অদ্ভুত দেখতে দূর্বাঘাসের ছোট্ট চামর দিয়ে আমাদের গায়ে মাথায় পুণ্যবারি ছিটিয়ে আশীর্বাদ করতেন, মুঠো ভরে ফলমূল দিতেন। বিয়ের পরে আমার বনেদি ঘটি শ্বশুরবাড়িতে দেখলাম, ওঁরা আমার মায়ের সন্তান-ষষ্ঠীকে একটা নিতান্ত বাঙাল ব্যাপার বলে মনে করেন, তাঁদের কাছে এটা একেবারেই জামাইয়ের দিন। আমার অবশ্য তাতে কোনও সমস্যা ছিল না, কারণ আমার শাশুড়ি সে দিন আমার পাতে অন্তত পাঁচ-ছ’রকমের মাছ-মাংস এবং সমানসংখ্যক মিষ্টি সাজিয়ে খেতে বসাতেন। কব্জি ডুবিয়ে তার সদ্ব্যবহার করতাম।
একশো বছরেরও বেশি আগে ব্রিটিশ পর্যবেক্ষকরা লক্ষ করেছিলেন, ‘ভারত জুড়ে বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনে অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হয়। মানুষের বিশ্বাস, এই দিন স্নান করে ব্রাহ্মণকে পাখা, ছাতা এবং অর্থ দান করলে অক্ষয় পুণ্য অর্জিত হয়। ফলে এই তিথি উদ্যাপন অত্যন্ত জনপ্রিয়।’
ভারতের অসামান্য বৈচিত্রের উৎকৃষ্টতম প্রমাণ হল এত রকমের ক্যালেন্ডার এবং ‘নববর্ষ’। বহু ভাষা এবং সংস্কৃতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধীরে ধীরে একে অন্যের সঙ্গে মিলেছে, তাদের উপর কোনও একমাত্রিক তকমা চাপিয়ে দেওয়া যায়নি। কিন্তু আমরা দেখব, এই বহু ‘নববর্ষ’-এর বৈচিত্রের মধ্যে ক্রমশ একটা ঐক্যের ধারণা তৈরি হয়েছে।
একটা প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে: খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিনকে ‘গুড ফ্রাইডে’ কেন বলা হয়? এমন যন্ত্রণাদায়ক অবসানের মধ্যে ‘শুভ’টা কী? বস্তুত, জার্মানিতে এবং অন্য কোথাও কোথাও খ্রিস্টধর্মের কিছু ধারায় এই দিনটির নাম ‘বেদনাময় শুক্রবার’। ইংরেজি নামটির একটি ব্যাখ্যা হল, এটি ‘গড’স ফ্রাইডে’র পরিবর্তিত রূপ। আবার, পবিত্র (‘হোলি’ বা ‘পায়াস’) অর্থে প্রাচীন ইংরেজিতে ‘গুড’ শব্দটি ব্যবহৃত হত, নামটা সেখান থেকেও এসে থাকতে পারে। এটিই ইস্টার পরবের প্রধান দিন।
ভারতবাসী সারা বছর ধরে যত উত্সব করে, তার মধ্যে হোলির সঙ্গে শাস্ত্রের সম্পর্ক সবচেয়ে কম আর বেলাগাম হুল্লোড় সবচেয়ে বেশি। ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে এই উত্স, সাধারণত আগের রাত্রে হোলিকা দহন দিয়ে এর সূচনা হয়, তার পর সারা দিন অসহায় মানুষজনের উপর আবির এবং রঙের বর্ষণ চলে, শেষ হয় মিষ্টি এবং অন্য নানা খাদ্য ও পানীয়ের উল্লাসে। পণ্ডিত এস এম নটেশ শাস্ত্রীর বক্তব্য: ‘এর সঙ্গে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কিছুমাত্র যোগ নেই, তবে নির্বোধ আচরণ আছে প্রভূত পরিমাণে।’